রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ইউনেসকোর আপত্তি প্রত্যাহার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতিসংঘ শিক্ষা,
বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের
ব্যাপারে তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। একই সঙ্গে সুন্দরবনের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা
থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের
৪১তম বার্ষিক অধিবেশনে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
তবে ইউনেসকো ও বিশ্ব ঐতিহ্যবিষয়ক কমিটির পক্ষ থেকে
এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হয়নি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে সুন্দরবনের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ গেল কি গেল না, সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। তবে সম্মেলন শুরুর দিন সুন্দরবন সম্পর্কে যে খসড়া সিদ্ধান্ত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তাতে সুন্দরবনের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ২০১৮ সালের সভায় নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হয়নি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে সুন্দরবনের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ গেল কি গেল না, সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। তবে সম্মেলন শুরুর দিন সুন্দরবন সম্পর্কে যে খসড়া সিদ্ধান্ত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তাতে সুন্দরবনের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ২০১৮ সালের সভায় নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির খসড়া সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সুন্দরবন ও তার
আশপাশের এলাকা (দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল) নিয়ে একটি কৌশলগত পরিবেশগত প্রভাব
সমীক্ষা প্রতিবেদন করতে হবে। ওই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে রামপালসহ ওই
এলাকায় কোনো ধরনের শিল্পকারখানা না করার পক্ষে ইউনেসকো থেকে বলা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন
বলেন, বাংলাদেশ সরকার যে সুন্দরবন রক্ষায় যথেষ্ট পরিমাণে উদ্যোগ নিয়েছে,
তা এবার ইউনেসকো স্বীকার করে নিল। সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশ সামনের
দিনগুলোতে আরও কাজ করে যাবে।
খসড়া সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে
যাওয়া পশুর নদ খননের আগে অবশ্যই পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করতে হবে।
সুন্দরবনের প্রতিবেশগত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন (ইকোলজিক্যাল মনিটরিং রিপোর্ট)
দিতে হবে। এই সুপারিশগুলো বাংলাদেশ কতটা বাস্তবায়ন করল, সে ব্যাপারে ২০১৮
সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশকে প্রতিবেদন দিতে হবে।
সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রামপাল
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যাপারে ইউনেসকোর আপত্তি তুলে নেওয়ার ব্যাপারে সরাসরি
সিদ্ধান্ত হয়নি। বলা হয়েছে, সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার কী করছে, সে
সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে ওই প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে
ইউনেসকো সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে গত বুধবার পোল্যান্ডে ক্রাকাও শহরে অনুষ্ঠিত
ইউনেসকোর ৪১তম সভায় বাংলাদেশের সুন্দরবনের বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। বাংলাদেশ
সময় রাত ১১টায় শুরু হওয়া তুরস্কের পক্ষ থেকে সুন্দরবন বিষয়ে কথা বলার জন্য
ফ্লোর চাওয়া হয়। ইউনেসকোতে নিযুক্ত তুরস্কের প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশ
সুন্দরবন রক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সুন্দরবনে কীভাবে মিঠাপানির
প্রবাহ বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশকে এখনই বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার সুপারিশ করে
২০২১ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
বাংলাদেশের পক্ষে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক
উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন
উদ্যোগ তুলে ধরেন। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের যাতে কোনো
ক্ষতি না হয়, সে জন্য সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,
এর বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান যেন বজায় থাকে, সে জন্য বাংলাদেশ সব ধরনের উদ্যোগ
নেবে।
ওই দলে ছিলেন বিদ্যুৎসচিব আহমদ কায়কাউস, ফ্রান্সে নিযুক্ত
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেসকোর স্থায়ী প্রতিনিধি এম শহিদুল ইসলাম,
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক রইছুল আলম মণ্ডল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান খালিদ
মাহমুদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হুসাইন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের
পরিচালক সুলতান আহমেদ।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির এ সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে এক
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ঐতিহ্য
সংরক্ষণে ভারসাম্য বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার জন্য
কমিটিকে ধন্যবাদ।
ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা সুন্দরবনের কাছে
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে সুন্দরবন
রক্ষা জাতীয় কমিটি ও পরিবেশবাদীরা। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের আপত্তির
পরিপ্রেক্ষিতে রামপাল পরিদর্শন করে ইউনেসকো ও পরিবেশ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক
ইউনিয়ন আইইউসিএনের একটি দল। পরে তারা প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে
রামপালকে সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ বলে উল্লেখ করে প্রকল্পটি অন্য
স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ ব্যাপারে
বলেন, ইউনেসকো এত দিন ধরে যে অবস্থান নিয়েছে, তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম।
কেননা এর মাঝখানে এমন কোনো কিছু ঘটেনি বা প্রকল্পটি সুন্দরবনের পাশ থেকে
সরানো হয়নি। ফলে ইউনেসকো থেকে এ ব্যাপারে লিখিত কোনো মন্তব্য পাওয়ার আগে এ
বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে তিনি বলেন, ‘ইউনেসকো যদি রামপালের
ব্যাপারে আপত্তি তুলেও নেয়, তাহলে দেশের জনগণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যাপারে
তাদের আপত্তি তুলে নেবে না। কেননা এই প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতির
বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। জনগণের করের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে
সরকার যদি কোনো সংস্থাকে প্রভাবিত করেও থাকে, তাতে আমাদের আন্দোলন থামবে
না।’
No comments